Founder

 

আলোকবর্ত্তীকা

 

১৯৪৪ খ্রী: অধ্যাপক আব্দুল মালেক ব্রাহ্মনবাড়িয়া জেলার নবীনগর থানার অমত্মরগত শিকানিকা গ্রামে এক সম্ভ্রামত্ম মুসলিম পরিবারে জনম গ্রহন করেন।

 

১৯৫০-এ তিনি মাত্র ৪ বৎসর বয়সে বাড়ী থেকে তিন মাইল দুরে ফতেপুর বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তি হন এবং প্রত্যেক ক্লাসে তিনি  পরীক্ষায় প্রথম স্থান পেতেন। প্রচন্ড মেধাবী ছিলেন। অত্যুক্তি হবে  না যে তিনি ইংরেজিতে খুব ভালো ছিলেন। ছোট বেলা থেকেই তিনি বই পড়ার প্রতি আশক্ত ছিলেন। সুতরাং তিনি যেখানেই যেতেন তার বইই থাকত সব সময়ের সঙ্গী।

 

১৯৬০ সালে তিনি  মর্যাদার সাথে মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ন হন এবং ১৯৬৩ -তে ব্রাহ্মণবাড়িয়া কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ন হন। পরবর্তীতে তিনি জগন্নাথ কলেজে ( বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয় ) ভর্তি হন এবং সম্মানের সাথে বিজ্ঞানে সণাতক ডিগ্রী লাভ করেন। তিনি দুরদৃষ্টি সম্পন্ন ও উচ্চাকাঙ্খী ছিলেন। তার জীবনের প্রথম ও প্রধান লক্ষ ছিল এক জন আদর্শ চিকিৎসক হওয়া। সেটা ১৯৬৫ সালের কথা। ঐ বছরই তিনি চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে এম.বি.বি.এস-এ ভর্তি হন। ১৯৭১ এ ডিসটিংশন সহ উত্তীর্ন হন। ১৯৭৩-এ দক্ষ চিকিৎসক ড: মালেক থানা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা হিসেবে নবীনগর থানায় পেশাদার জীবন শুরম্ন করেন।

 

এটা মনে রাখা দরকার তাঁর আমলেই থানা স্বাস্থ্য কমপেস্নক্স ভিত্তি পায়। স্বাভাবিক ভাবেই অনেক সমস্যা জর্জরিত ছিল। বিশেষত: তৎকালীন সাংসদ জনাব সিদ্দিকুর রহমান তাঁর গ্রামে হসপিটাল টা স্থানামত্মর বা প্রতিষ্ঠা করার জন্য অনেক বাধার সৃষ্টি করছিলেন। কিন্তুু ডা: মালেক অবিচল, মেধাবী এবং নিষ্ঠাবান জ্ঞানী মানুষ। তাঁর শক্তিশালী ও বিচক্ষন নেতৃত্বে থানা স্বাস্থ্য কমপেস্নক্সটি আদর্শিক ভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়।

 

১৯৭৪ সালের ১৬ ডিসেম্বর তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপিকা ডা: উম্মে সালমা নামের এক মহিয়সী নারীর সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। মরহুমা নিজে  আর একজন উজ্জ্বল নক্ষত্র। তিনি ছিলেন ঢাকা বিশব বিদ্যালয়ের উর্দূ বিভাগের চেয়ারম্যান। তাঁর রূহের মাগফিরাত কামনা করি।

 

তিনি ছিলেন খুব পরিশ্রমী। তিনি একটি সফল ও সুন্দর  জীবন গড়তে উচ্চ শিক্ষার জন্য  কঠোর পরিশ্রম করেন। ১৯৭৬-এ তিনি পিজি হসপিটাল ( বর্তমানে BSMMU ) এ এবং ১৯৭৮ এ মিটফোর্ড হসপিটালে- সি এ হিসেবে যোগ দেন। ১৯৮০ সালে রেজিষ্ট্রার হিসাবে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হসপিটালে যোগ দান করেন। পরে ১৯৮৯-তে মাইক্রোবায়োলজীর প্রভাষক হিসাবে বর্তমান BSMMU -তে যোগ দেন। পর্যায়ক্রমে তিনি সেখানে সহকারী অধ্যাপক এবং সহযোগী অধ্যাপক হিসাবে কাজ করেন।  সবশেষে তিনি ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ এর ভাইরোলজী বিভাগ থেকে  অধ্যাপক হিসাবে অবসর গ্রহন করেন। অধ্যপক মহোদয়ের ব্যক্তি জীবন ছিল খুব সাদাসিদে। ঘুষ-দুর্নীতির বিরম্নদ্ধে তার অবস্থান ছিল খুব পরিষ্কার। সততার এক উজ্জ্বল দৃষ্টামত্ম ছিলেন তিনি।

 

প্রশাসনিক ক্ষেত্রে তিনি নিবেদিত থাকলেও সকলেই তাঁর মানিয়ে নেয়া এবং দয়ার্দ্র ব্যবহারে সন্তুষ্ট থাকতেন। ১৯৯০-এ ঢাকার যাত্রাবাড়ীতে নাজ ডায়াগোনিস্টিক সেন্টার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে মানবতার সেবার জন্য লক্ষ স্থীর করেন। পরবর্তিতে দেশে চিকিৎসা সেবার উন্নয়নের লক্ষে সরকারী চাকুরীর পাশাপাশি আই.এম.টি অর্থৎ মেডিকেল টেকনোজিক্যাল প্রতিষ্ঠান এবং হেল্থ টেকনোলজিতে  BSc. কোর্স চালু করেন। ঢাকার মিরপুরে, ১৯৯৯ সালে আই.এম.টি বেসরকারী ভাবে শুরম্ন হয়। তদ্রম্নপ পরে রাজশাহী, চট্টগ্রাম ও কুমিলস্নায় ডিপেস্নামা পর্যায়ে MTI প্রতিষ্ঠা করেন। তাঁর উদ্দোগে এবং সহযোগিতায় সর্ব প্রথম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে  BSc. in health technology ( Laboratory and Dental ) কোর্স  প্রতিষ্ঠিত হয়।   হেল্থ্  টেকনোলজী  সেক্টরে

তাঁর অবদান অবিস্মরনীয়।

 

যদিও অনেক MBBS  চিকিৎসক ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্রের জন্য নিয়োগ দেয়া হয় কিন্তু বাসত্মবতা হলো সেখানে তাঁরা থাকেন না,  তাঁরা থাকেন শহরে। ফলতঃ দেশর প্রত্যমত্ম এলাকার একটা বৃহৎ জনগোষ্ঠি প্রায়শ:ই স্বাস্থ্য সেবা থেকে বঞ্চিত হচেছন। তিনি এ ধরনের চিকিৎসায় অব্যবস্থা দেখে মর্মাহত হন। এবং তিনি দেশে প্রথম বেসরকারী ম্যাট্স  ( Medical Assistant Training School-MATS)  প্রতিষ্ঠায় নেতৃত্ব দেন।

 

তিনি ঢাকা ম্যাট্স, রাজশাহী ম্যাট্স, উদয়ন ম্যাট্স প্রতিষ্ঠা করেন। এসব প্রতিষ্ঠান থেকে পাশ করে অনেকে মর্যাদার সাথে পাবালিক এবং বেসরকারী  প্রতিষ্ঠানে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করছেন। শুধু তাই নয়, তাঁর এই অবদানে ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্র গুলোতে গ্রামের প্রত্যমত্ম এলাকার রোগীরা স্বাস্থ্যসেবা পাচেছন। এর সাথে তিনি রাজশাহী বিভাগে বেসরকারী পর্যায়ে একমাত্র প্রথম ডেন্টাল কলেজ স্থাপন করেন, যা উদয়ন ডেন্টাল কলেজ নামে খ্যাত।

 

এই মহৎপ্রান ব্যাক্তিটি একটি মেডিক্যাল কলেজ, একটি নার্সিং কলেজ, একটি বিশ্ববিদ্যালয় এবং তার নিজ গ্রামে একটি মাদ্রাসা গড়তে চেয়েছিলেন। জাতির দূর্ভাগ্য তিনি সে সুযোগ পাননি । তিনি হঠাৎ ২০১২ সালে ২৯ মার্চ  ৬৮ বছর বয়সে সকল কে কাঁদিয়ে পরলোক গমন করেন। তাঁর পিতা ছিলেন মুন্সি আমিন উদ্দিন সরকার, মাতা: মতিজার নেসা।

 

তাঁর তিন সমত্মান । তাঁর প্রত্যেক সমত্মানকে সুশিক্ষিত ডাক্তার হিসেবে রেখে গেছেন। তাঁর বড় সমত্মান ডাঃ আনিস মালেক হেল্থ টেকনোলজী ভিত্তিক শিক্ষা সারা দেশে বিসত্মৃত করার জন্য অক্লামত্ম পরিশ্রম করে চলেছেন। তাঁর কন্যা ডাঃ শিরিন মালেক এবং কনিষ্ঠ সমত্মান ডা: আরিফ মালেকও তাঁদের পিতার আদর্শে অনুপ্রানিত এবং বড় ভাই ডাঃ আনিস মালেকের এসব কাজে আমত্মরিক সহযোগী। ডাঃ আনিস মালেক তাঁর পিতার অসমাপ্ত আকাঙখা গুলো পূরনে বিশেষভাবে তৎপর। এরই ফলশ্রম্নতিতে তিনি পিতার একটি স্বপ্ন ইতি মধ্যেই পূরন করেছেন। আর তা হলো রাজাশাহীতে পূর্নাঙ্গ একটি নার্সিং কলেজ, যা উদয়ন নার্সিং কলেজ হিসাবে পরিচিত।

 

আজ মরহুম ডাঃ মালেকের ছাত্র যারা শিক্ষা শেষে কর্মজীবনে রত, প্রতিষ্ঠান সমূহের শিক্ষক বৃন্দ এবং কর্মকর্তা কর্মচারী বৃন্দ সবাই এই বিরাট প্রতিষ্ঠান স্বরূপ মহৎপ্রান ব্যক্তিটির জন্য গর্বিত। সর্ব শক্তিমান আলস্নাহ তায়ালা যেন এই আলোকবর্ত্তীকা ( মরহুম ) কে জান্নাতে উৎকৃষ্ট স্থান নসিব করেন। ( আমিন )

 

 

 

 

 

-মরহুমের প্রতিষ্ঠান সমূহের

শিক্ষক, কর্মমর্কা-কর্মচারী বৃন্দ

Emergency Contact

Sat-Thu 09.00-06.00 Sat-Thu 09.00-06.00
Eligance House-107, Housing Road, Sopora, Upashar Ward 15, Boalia, Rajshahi
Translate »